বয়স তখন বড্ড কাঁচা ---------
কঠিন মরা বাঁচা ,
যখন তখন মেতে উঠতাম ------
আমরা কচিকাচা ।
সকাল -বিকাল ,দুপুর-সাঁঝে
ছুটে বেড়াতাম বন
নীল আকাশের গায়ে গায়ে------
ভাসিয়ে দিতাম মন ।
পাঠশালাতে যাবার পথে
ঢিল পড়তো গায়ে
পাড়ার ছেলের উঁকিঝুঁকি
যখন যেতেম নায়ে ।
মনটা আমার আকাশ ছিল
পায়েতে ঝরনা
সকল বারণ ওড়না করেই
পুতুল ঘরে ধর্না।
পুতুল ঘরে বর-কন্যে
জমতো বড়ো ভালো
ওদের আবার ঘর সাজাতে
জ্বলে ওঠতো আলো ।
একদিন এক দুষ্ট বালক
এলো পুতুল ঘরে
আদর করে দুষ্টুমিতে
খামচে আমায় ধরে ।
কোমল মনে উতল-হাওয়ায়
বুক দুর্ দুর্ করে ।
অভাবী বাবা সংসারেতে
হলেন নিরুদ্দেশ
বেশ কিছুদিন কোত্থাও তার
মিলল না সন্দেশ ।
বছর কয়েক বাদে বাবা
ফিরে আসলো গাঁয়ে
অবহেলায় মারণ ব্যাধি
ছড়িয়েছে তার গায়ে ।
মাতা আমার বড্ড ভালো
করেনি মুখ কালো
যত্নে-সেবায় চেষ্টা করে
করতে তারে ভালো ।
সহজে তা সারার নয়
সেতো ভীষণ কঠিন অসুখ
মায়ে আমার বিলিয়ে দিলো
নিজের যতো সুখ ।
গ্ৰাম ছেড়ে তাই শহর পথে
আলো-আধারি ঘরে
নিত্য নতুন মিনসে তারে
ভাসায় , দিন- দুপুরে ,রাতে ।
অনেক রাতে মায়ের ফেরা
সারা কালি গায় !
বাবার -আমার মুখ দেখে
ক্লান্তি যেত তার ।
বাইরে-ঘরে কবর দেওয়া
কষ্টে ভরা বুক !
জোটেনি তার স্বামীর ঘরে
একটু বেশি সুখ ।
বাবার অসুখ , মায়েরও অসুখ
আকাশ এখন ছোটো
বাতাস আমার বিষিয়ে গেছে
ছোট্ট খাটে আঁধার ঘরে
পায়েতে বাঁধা সুতো ।
স্বপ্ন আমার ভেঙে গেছে
ঘাটে বাঁধা তরী
কলঙ্কে তাই চাঁদ ভাসিয়ে
নিত্য জোয়ার তুলি ।
মনটা আমার আর ভাসেনা
স্বপ্নপরীর দেশে
স্বপ্নগুলো কবর দিয়ে
যাই ভেসে যাই হেসে ।
উজান গাঙে ভয় পাইনা
নাইতে নেমে খেলি
রক্ত-রঙে রাঙিয়ে আনি
দুঃখী মনে হোলি ।
সুপ্ত মনে জল ছিটিয়ে
জাগাই রাতের তারা
গুপ্ত মন্ত্রে,তন্ত্রে করি
সকল মনোহরা ।
সবুজ পাখির সবুজ ডানায়
ছিটিয়ে যত রঙ
বিরহে যত দুঃখী মনের
করেছি শত চয়ন ।
অফিসের বাবু আর মজদুর-মুঠে
নিয়ে যায় লুঠেপুটে
শরীরের ভাঁজে যা কিছু আছে
সবটাই দিই ঢেলে ।
রোজ-ই ভেজে আমাদের ঘামে
যত কামাতুর বুক
তৃষ্ণার্তে রক্ত-ঘামে
ভিজিয়েই পাই সুখ ।
আঁধার রাতে চাঁদ জাগিয়ে
বৈঠা বেয়ে যাই
দুঃখীমনে দ্বীপ জ্বেলে তাই
প্রসাদে উচ্ছিষ্ট পাই ।
ভালোর মাঝেই সুনাম
আমাদেরও দুর্নাম
ভোমরাগুলা ভাম হয়ে
খোলে গোপন খাম ।
সকলের কাজে ছুটি আছে বটে
আমাদের ছুটি নাই
দিন -দুপুরে খুনসুটিতে
আমাদের জুড়ি নাই ।
হাজারের মাঝে বেচিয়া দেহ
আর কাঁদেনা আমার মন
শত শ্রমিকের মত
আমারও দেহ করেছে পরিশ্রম ।
বিন্দু বিন্দু রক্ত বেচিয়া
সঁপেছি সংসারে
যতখুশি থুতু ছুঁড়ে দাও দেহে
লাগেনা আমার গায়ে ।
মাতা-পিতা মোর দেবতাসম
ওদের তরেই মরি
ছোকরা-বুড়ো শত মানুষে
করেছে আমায় চুরি ।
ঘৃণার আধারে সমাজের বুকে
রয়েছি মৃতপ্রায়
জ্ঞানে-অজ্ঞানে সঁপেছি নিজেরে
মনুষ্য-দেবতায় ।
অহমিকা আর অপবাদে তাই
যতই ছিটিয়ে দিস
আমার ভিতরে বাইরে থুতু
আমিও এক দুঃখিনী মায়ের
একমাত্র ঋতু ।
----------এ এফ এম বাইতুল্লা
০৯/১১/২০১৮